বাক্‌ ১১১ : অভিষেক ঘোষ




শুভ বার্তা

এখন আমার যে মুহূর্ত, বা মুহূর্তের যে আমি সেই আমি তোমার কাছে মন খুলে যতবার দশরথের রথ নেই, দশটা হাত নেই সে কথা চুপি চুপি বলেছি তুমি শুনে সম্মতি জানিয়েছ আর রাম লক্ষ্মণ ল কুশের কী খবর জানতে চাইলেই কখনও কখনও প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে দিয়ে বলেছি, হনুমান এখন সরকারি চাকরি করছে জানো?
তুমি তো একেবারে হতভম্ব হয়ে বল, সেই রাম ভালবাসা সেই সীতা ভালো বাসা সবই আজ উধাও তবে?
হয়ত কিছুটা তাই...কিন্তু এখন রোজ না হলেও সপ্তাহে দু তিন বার ও এসে দেখা করে যায়... রামই বলেছে ওকে, শরীরের উপর চাপ না দিতে।
আচ্ছা রাবণ কেমন আছে? আমি বলি না তোমায়, তার খবর আর কেউ রাখুক ছাই না রাখুক জটায়ু রাখে, সে খবর আমি জানি...
তুমি বল আচ্ছা সূর্পনখা? ওর নাক গজিয়েছে আবার, সামনের অঘ্রাণে ওর বিয়ে...
আচ্ছা এই খবর গুলো আর কেউ জানে না, না?
না, এতদিন আমি জানতাম... এবার তুমি জানলে,  
আশা করছি আর বেশি না, মিনিট দশের মধ্যেই সবাই জেনে যাবে,কিন্তু একটা কথা
স্ক্রিন শট তুলে কারো সরকারি চাকরির খবর ও বিবাহবার্তা না দেওয়াই ভালো...শত হলেও শুভ কথা তো, বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলে আসাই ভালো...
তাহলে আমি যাবো?
হ্যাঁ আর দেরি কিসের? ঢাক ঢোল নিয়ে বেড়িয়ে পড়ো এবার।

                                                                          
পরিচর্যা

এখন ভেবেছি যে ছোখ দিয়ে অন্ধ গাছের ছায়া দ্যাখে, যে কান দিয়ে বধির পাখির আওয়াজ শোনে
যে মস্তিষ্ক দিয়ে পাগল নিজেকে নিয়ে চলে যায় খেত খামার ফেলে গ্রিসের গুহা চিত্রে কালো
রাস্তা দিয়ে যে লণ্ঠ জ্বলে ওঠে, কুঁড়ে ঘ, রাজপ্রাসাদ, পাহাড়ের নীচে বসে থাকা সন্ন্যাসী
জটার উপর থেকে উইপোকার ঢিবি হয়ে রামায়ণ চাপা পড়ে যায়, অধ্যায়ের পর
অধ্যায় আমার কান্না হাসি অগুতি সিঁড়ি নামা ওঠার ফলে সীমিত হয় না
ফেটে বেরোতে থাকে বালির স্তুপ থেকে লক্ষ্য করলে বুঝি আগ্নেয়গিরি
লাল নীল হলুদ আগুনের ফুলকি নামতে নামতে জলে মিশে যায়
মাছের গায়ে ধোঁয়াটে রান্নাঘর দেখলে দম নতুন করে বন্ধ
হয়ে আসে, নিজের গলায় নিজের ছবি ডুবে যেতে যেতে
গঙ্গা পদ্মার মাঝখানে যেটুকু বাংলা ভাষা পড়ে
থাকে প্রতি দিন রাত, সূর্য হওয়ার সময় থেকে
বাদুরের মত করে উড়ে যাওয়া অবধি
বা গাছের ডালে পাতার নতুন মুখ
পাখির বাসার সাথে নিজের ঘর
বাড়ি ভেঙে পড়া মন থেকে
প্রতিনিয়ত দেয়াল গজিয়ে
তার উপরে আরও
নতুন ফুলের
টব লাগিয়ে
জল দিতে
চায়।

                                                                                   

বন্ধ দম

তুমি তো রাতের খাবারে খরার মাটি
বৃষ্টি আগুনে পুড়ে যাওয়া ক্ষেতেরপাশ
তুমি তো সকালআলোয় ঠিকরে আসা
কুয়াশাময় স্নিগ্ধ পাতা, বাক্যে বাক্যে
কিছুমাস
কাটিয়েই ভেঙেছ চশমা, তার বাষ্পে লাগা
শহরের ছলছলে চোখ...
তোমায় তো পাশ কাটিয়ে গেছে নদী,
স্রোতের ঝড়ে,
উড়ে যাওয়া ভালো লোক
তুমি তো সামলে রাখো গুপ্তধনে, জোরের মন  
চাবি ফুরালে যত দরজা বাতাস খুলে গায়ে 
তুমি তো উড়িয়েছ ঘুড়ি, সেই পাহাড়গোনা,
দিনগুলিতে...
যখন রাস্তা পেলেও, বাতাস শুধুই, আপনাআপনি
মিলিয়ে যায়... 

                                                         

পাখির প্রতিশোধের ইচ্ছে হয় না তাই

পালকের ব্যথা হলে, পাখির চোখে আকাশ বিঁধেছে
চোখে আলপিন বিঁধলে, এর চেয়ে অনেকে আরাম
আজ হাওয়া দাও পাখিকে। জেদ দাও। আলো দাও
যেন সে একবার ব্যথা ভুলে, আমার থেকে
অন্য দেশে গিয়ে কাউকে খাঁচায় আবদ্ধ করে,
তার বাইরে বসে বসে—
একটি একটি করে খাঁচার ফাঁক বন্ধ করে দিতে
পারে।



                                                                   (চিত্রঋণ : Julien de Casabianca)

66 comments:

  1. "শুভবার্তা" ও "পরিচর্যা" অনবদ্য লাগলো অভিষেক দা। মন ভরে গেল সকাল সকাল এত ভালো কবিতা পড়ে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. তুমি ই প্রথম এবার... @ অভিষেক ঘোষ

      Delete
  2. আমি যাযাবরJune 16, 2017 at 10:36 PM

    প্রতিটি লেখা অনন্য ..খুব সুন্দর ...

    ReplyDelete
  3. প্রথম ও শেষ লেখাটি ভীষণ মন কে ছুঁলো... কারণ টা বোধয় আমি বিশেষত মেয়ে বলে। তবে লেখাটির কথা মনে থাকবে বেশ কদিন।

    ReplyDelete
  4. baahh... khub sundor.. sesh lekha ta sottiee osadharon hoeche bondhu.

    ReplyDelete
    Replies
    1. ্ধন্যবাদ বন্ধু...

      Delete
  5. চারটিই ভালো লেগেছে তবে শুভবার্তা আর পরিচর্যা দুর্দান্ত লেগেছে।

    ReplyDelete
  6. শেষের তিনটি খুশি রাখল সর্বাধিক । ভালো লাগা অনেক।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ... দাদা... @ অভিষেক ঘোষ

      Delete
  7. চারটি কবিতার মধ্যে প্রথম ও শেষ টি অনবদ্য লাগল অভিষেক দা।

    ReplyDelete
  8. শেষ তিনটি লেখা বেশ ভালো। প্রয়োজন এরকম বৈচিত্র্যের।
    প্রথমটি লঘু হইয়া গিয়াছে।
    আরো পড়ার ইচ্ছে রইল।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমিও আপনারে খুঁজে পেলে আবার পাঠাবো... নমস্কার নেবেন...। @ অভিষেক

      Delete
  9. dwitiyo o sheshti besh valo laglo

    ReplyDelete
  10. Replies
    1. সব কি আর ভাল হয় দাদা...?? @ অভিষেক ঘোষ

      Delete
  11. দেয়াল গজিয়ে দিলে তো দাদা! দারুণ!

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভাইয়া ইয়ে দিওয়ার টুট তে কিউ নেহি? @ অভিষেক

      Delete
  12. আমাদের মধ্যে সবচেয়ে আলাদা তুই

    ReplyDelete
    Replies
    1. সবাই আলাদা আলাদাই ভাই... @ অভিষেক

      Delete
  13. খুব ভাল, শুভবার্তা বিশেষ করে।

    ReplyDelete
  14. Replies
    1. আচ্ছা দাদাভাই... @ অভিষেক ঘোষ

      Delete
  15. তোমার লেখা বেশ ভাল লাগে...আরও পড়তে চাই

    ReplyDelete
    Replies
    1. দেখি, আর হয় কি না কখনও। ভাল থাকবেন। @ অভিষেক

      Delete
  16. ধন্যবাদ। @ অভিষেক ঘোষ

    ReplyDelete
  17. আচ্চা ভাই... @ অভিষেক

    ReplyDelete
  18. khub valo laglo sesh kobita ti .. munsiyanar chap acha bhai..

    ReplyDelete
  19. খুব সুন্দর লিখেছেন

    ReplyDelete
  20. Enter your comment...শুভবার্তা খুব ভালো লাগল

    ReplyDelete
  21. prothom 2to ar sesher ta khub bhalo laglo..kolom choluk..anek subheccha

    ReplyDelete
  22. ভালো লাগল। তবে শেষেরটা বেশি ভালো।

    ReplyDelete
  23. sob bhalo tobe sottie last 3 te darun hoyeche

    ReplyDelete
    Replies
    1. জন্ম দিলে তুমি। @ অভিষেক

      Delete
  24. খুব সুন্দর লেখার বাঁধন....
    বিশেষ করে "পরিচর্যা"..

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ @ অভিষেক

      Delete
  25. অসাধারণ
    দাদা!!!!!!!!!!!!!

    ReplyDelete
  26. লেখা, প্রেজেন্টেশন সব কিছুই খুব স্মার্ট । বেশ ভালো।

    ReplyDelete
  27. চারটি লেখাই নিজেদের নিজেদের মত সুন্দর,গুছিয়ে লেখা। তবে 'বন্ধ দম' লেখাটা বেশি ভালো লাগলো।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্নবাদ আপনাকে@ অভিষেক

      Delete
  28. সবকটাই খুব সুন্দর……'শুভ বার্তা'র পরিবেশনটা দারুণ মজাদার কিন্তু শাণিত ও বাস্তব…
    সেঅর্থে দারুণ লাগলো…মন্দ্রাক্রান্তার দুটো লাইন মনে পড়ে গেল"ঠিকঠাক ওষুধ খাচ্ছ তো…
    আরে!খাচ্ছি বলেই না তোমার দিকে তাকিয়ে দাঁত ক্যালাতে পারলাম"

    ReplyDelete
    Replies
    1. ha. uni doctor,sunechilam////@ avishek ghosh

      Delete
  29. দ্বিতীয় কবিতাটিতে ফর্ম এবং বক্তব্যের সাযুজ্য দূর্দান্ত লাগল।

    ReplyDelete
  30. প্রতিটি কবিতা নিজস্ব আবদারে ভালোবাসা আদায় করে নিচ্ছে।বিশেষ দৃষ্টি খেতে চাইছে শুভ বার্তা । আমার মনে হচ্ছে এক জন মানুষ কবি হতে যে সংগ্রাম করে।নিজস্ব ভাবনার কারণে নিজেকে শেষ করে ফেলতে উদ্যত হয়।ঠিক তখনই শুভ বার্তা আশে অশুভের বিনাশে।রাম ঘৃনা করে তবে বিভীষন কে।

    ReplyDelete
  31. Pakhir o porishodher iche hy.. bolte pare na bodhay.. :-) valo laglo sb kota.

    ReplyDelete
    Replies
    1. ha bhai,se karonei to ami bollam or kothata@ avishek

      Delete